নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) অপারেশন শাখার প্রধানসহ তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার রাতে যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো- মাইনুল ইসলাম মাহিন ওরফে মিঠু ওরফে হাসান, শেখ সোহান সাদ ও মুরাদ হোসেন কবির। গতকাল এই ৩ জঙ্গিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের ডিসি সাইফুল ইসলাম গত রাতে আমাদের সময়কে জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় বন্দি আসামিদের সঙ্গে গ্রেপ্তার মাইনুল ইসলাম মাহিনের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাহিন হুজির অপারেশন কমান্ডারের
দায়িত্বে রয়েছে। ২০১৬ সালে এ জঙ্গি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। সোহান সাদও গ্রেপ্তার হয়েছিল ২০১৬ সালে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, মাহিন হুজি পুনর্গঠন, পূর্ণাঙ্গ শূরা কমিটি প্রস্তুত করা, সংগঠনের অর্থদাতা এবং সদস্যদের কাছ থেকে অর্থের জোগান নিশ্চিত করা, সদস্য ও অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ, কারাগারে আটক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের জামিনের ব্যবস্থা, বান্দরবান-নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় জমি লিজ নিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার কাজে নিয়োজিত ছিল।
তারা দেশের ৬৪ জেলায় সংগঠনের বিস্তার ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পরিচয়ে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা কারাগারে আটক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর ও ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী খানের নির্দেশে সাংগঠনিক কাজ চালাচ্ছিল।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেপ্তার মাহিন দীর্ঘদিন ধরে হুজির প্রধান অপারেশন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছে। সে সাংবাদিকের বেশ ধরে সংগঠনের দাওয়াতি কাজ, অর্থ সংগ্রহ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করছিল। তার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতা করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ২০১৬ সালে সে হুজির শীর্ষনেতা কারাবন্দি মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়।
গ্রেপ্তার সোহান সাদ সুনামগঞ্জের বিবিয়ানা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ঢাকায় মিরপুর বাঙলা কলেজে পড়ার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতাও করত। ২০১৬ সালে একুশে বইমেলায় নাশকতার ঘটনায় সে গ্রেপ্তার হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে বিস্ফোরক মামলায় এবং ২০১৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। জামিনে বের হয়ে সে মাহিনের নেতৃত্বে হুজির সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করছিল। গ্রেপ্তার মুরাদ ব্যবসার আড়ালে হুজির দাওয়াতি ও বায়তুল মালের দেখভালের দায়িত্বে ছিল।
গ্রেপ্তারের পর এই ৩ জঙ্গির কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, ৫টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি চাপাতি, দুটি ছোরা, ১০টি ডেটোনেটর, ১৭০টি বিয়ারিং লোহার বল, ৫ লিটার এসিড, তিনটি আইডি কার্ড ও একটি উগ্রপন্থি বই উদ্ধার করা হয়।